দুর্গাপুজো মানেই ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানার মেলবন্ধন ৷ তার উদাহরণ হতে পারে বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো ৷ হাজার হাজার বারোয়ারি পুজোর ভিড় আর থিমের চমক থাকলেও আজও অমলিন বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর গরিমা। কালের নিয়মে জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও আজও পুজোর সময় এই বাড়ির দালানে জ্বলে ওঠে আলো ৷ জমিদারি রীতি মেনে পালিত হয় দেবীর পুজো ৷ এই রায়চৌধুরী বাড়ির সাবেকি দুর্গাপুজো দেখতে ফি বছর ঠাকুর দালানে ভিড় জমান আবালবৃদ্ধবনিতা। লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময়ে এই এলাকায় জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। এখন সরকারিভাবে নীলকণ্ঠ পাখি ধরা ও দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পর তা উড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, এটাই প্রধান বিশেষত্ব এই বনেদি বাড়ির পুজোর। দশমীতে বিসর্জনের পর নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ালে, সে গিয়ে কৈলাসে ভগবান শিবকে খবর দেবে যে মা দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে রওনা দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের এই বিশ্বাস থেকে আজও বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদিগঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছে বারুইপুরের এই আদি জমিদার পরিবারে ৷ এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। এখনও সপ্তমী এবং অষ্টমীতে পাঁঠাবলি হয়। নবমীতে হয় আখ ও চালকুমড়ো বলি। দশমীর বিকেলে 40 জন বাহক প্রতিমা কাঁধে করে নিয়ে যায় আদি গঙ্গার সদাব্রতঘাটে বিসর্জনের জন্য।এলাকার মধ্যে প্রথম বিসর্জন হয় রায়চৌধুরীদের বাড়ির ঠাকুরের ৷ তারপর একের পর এক বাকি পুজোগুলির প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রুপোর পাখা দিয়ে হাওয়া দিতে দিতে এবং রুপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে করতে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে। বহুদিন ধরে এই রীতিই চলে আসছে। বর্তমানে বাড়ির প্রতিমা তৈরি করেন মৃৎশিল্পী অসীম পাল। বংশ পরম্পরায় তাঁর পরিবারের সদস্যরাই এই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আসছেন।
Be the first to comment